প্রিপারিং ফর বিজনেস নট ফর বিসিএস

আরো বিজনেস আইডিয়া ও লেখা আসছে...

নির্মাণ সামগ্রির ব্যবসায়


বিল্ডিং নির্মাণ সামগ্রী ব্যবসার সুবিধা ও অসুবিধাগুলো কিকি? এই ব্যবসায় কেমন আয় ব্যায় হয়?

এক সময় বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই বাস করতোমাটির ঘরেযাদের অবস্থা একটু উন্নত ছিল তারা বাস করতোটিনের ঘরে৷ কিন্তু এখন পরিস্থিতি কিছুটা হলেও ভিন্ন৷ আপনারাও লক্ষ্য করে থাকবেন মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থারপরিবর্তনের সাথে সাথে বর্তমানে তাদের বাসস্থানেরচেহারাটাও পাল্টে গেছে৷ গ্রাম বা শহর প্রায় সবখানেই বাড়িবানানোর ক্ষেত্রে মাটি এবং টিনের স্থান দখল করেছে ইটলোহা ও কাঠ৷ সেইসাথে মানুষ তার বাসস্থানকে অনেক বেশিসুরক্ষিতদীর্ঘস্থায়ী এবং দৃষ্টিনন্দন করার চেষ্টায় সর্বদাই ব্যস্ত৷ তাই একথা বলা যায় যেগ্রামাঞ্চলেও এর ছোঁয়া লেগেছে৷ আসুন জেনে নেওয়া যাক এই ব্যবসার সুবিধা ও অসুবিধাগুলো কি কি:

সুবিধাসমূহ:
1. এটি একটি লাভজনক ব্যবসা কারণ বাংলাদেশের সর্বত্রএর প্রচুর চাহিদা রয়েছে৷ 
2. এটির উৎপাদন প্রক্রিয়া খুব বেশি কঠিন নয়৷ 
3. নিজেই এই ব্যবসা স্বাধীনভাবে বা কর্মচারীর সাহায্য নিয়েপরিচালনা করা সম্ভব৷ 
4. আপনি নিজেই অন্য আরেকজন প্রশিক্ষকের কাছ থেকেকাজটি শিখে নিতে পারেন৷ 
5. এজন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো নিজ এলাকার মধ্যেথেকেই ক্রয় করা সম্ভব৷ 
6. আপনি নিজে অথবা কর্মচারীর মাধ্যমে উত্পাদিত পণ্যসহজেই বিক্রয় করতে পারবেন৷ 
7. আপনি নিজেই দোকানে বসে ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রিকরতে পারবেন৷ 
8. ব্যয়ের উপর নির্দিষ্ট লাভে আপনি আপনার উত্পাদিতপণ্য বিক্রি করতে পারবেন৷ 
9. মনে রাখবেন শুষ্ক মৌসুমে বা গরমকালে সাধারণত এসবজিনিস বেশি বিক্রি হয়ে থাকে৷ 

বিভিন্ন এনজিও থেকে এ ধরণের কাজে এখন বড় অংকের ঋণপাওয়া যায় যা আপনাকে আর্থিক সহায়তা দিতে পারে৷ আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও এ বিষয়ে সহায়তা দিয়েথাকে৷ 

• এ ব্যবসা করার জন্য প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা আছে৷ 
• এই ব্যবসায় লাভের পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সুযোগসৃষ্টি হয়
• এক কথায় এই ব্যবসার মাধ্যমে নিজের এবং পরিবারেরআর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব

অসুবিধাসমূহঃ
উদ্যোক্তাদের অনেকেই নানা ধরনের পণ্য তৈরি করতে গিয়েকিছু অসুবিধার কথাও উল্লেখ করেছেন৷ সুতরাং ব্যবসা শুরুরআগে অসুবিধাগুলো একটু ভেবে দেখা দরকার৷ যেমন:
• ভালো ফিনিশিং না হলে অনেক সময় পণ্য বিক্রি নাওহতে পারে৷ 
• কোনো কোনো জিনিসের চাহিদা সব সময় থাকে না৷ তাইকখনও কখনও সেগুলোর উৎপাদন  বন্ধ রাখতে হয়৷ 
• ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ভালো যোগাযোগ না রাখলেবড় কাজ পাওয়া যায় না৷ 
• স্বল্প পুঁজি এ ক্ষেত্রে আরেকটি প্রধান সমস্যা৷ আবারবাকির কারণে অনেক সময় পুঁজির সংকট হতে পারে৷ 
• বর্ষাকালে বেশিরভাগ সময়ই নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে৷ 
• অনেক সময় কাঁচামালের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পায়

বিল্ডিং নির্মাণ সামগ্রী ব্যবসায় কি ধরনের আয় বা খরচহতে পারেঃ
বিল্ডিং নির্মাণ সামগ্রীর চাহিদা এখন ব্যাপক এবং বিস্তৃত৷ ব্যক্তিগতভাবে যারা বিল্ডিং নির্মাণ করে অথবা যেসব ইমারতনির্মাণ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা এ ব্যবসার অন্যতমক্রেতা৷ আপনারা জেনে খুশি হবেন যেউত্পাদিত পণ্য খুচরাএবং পাইকারি হিসাবে বিক্রি করা যায়৷ তাই আয়ের দিক থেকেএ ব্যবসা একটি লাভজনক কাজ৷ আপনাদের সুবিধার জন্যএখানে উদাহরণ হিসাবে একজন উদ্যোক্তার লাভের হিসাবউল্লেখ করা হলো-

আয় ও খরচের খাত
টাকার পরিমাণ
এক প্রান্তিকে পণ্য বিক্রি থেকে আয়
৩৭,৫০০
কাঁচামাল বাবদ খরচ
১৬,৭৫০
অন্যান্য খরচ
১০,২০০
মোট খরচ
২৬,৫০
নীট লাভ (৩৭৫০০-২৬ঌ৫০) টাকা
১০,৫৫০
তথ্যসূত্র: আইটিডিজি (২০০২): নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা

মনে করি, একজন ব্যবসায়ী প্রতি মাসে নিচের পণ্যগুলোবিক্রি করেঃ
পণ্যের নাম
সংখ্যা
মূল্য (টাকা)
মোট মূল্য (টাকা)
ট্যাংক
৬০০০
১২,০০০
রেলিং পোষ্ট (নইচা)
১০০
৫০
,০০০
স্ল্যাব
২০
২০০
,০০০
রিং
১০০
৭৫
,৫০০
পিলার
১০০
৬০
,০০০
ভেন্টিলেটার
২০০
১৫
,০০০
মোট মূল্য


৩৭,৫০০

আবার এসব পণ্য উৎপাদন করতে যেসব কাঁচামাল লাগেতা হলো:
পণ্যের নাম
পণ্যের সংখ্যা
পণ্যেরদাম (টাকা)
পণ্যের মোট দাম (টাকা)
বালি
প্রতি গাড়ী
,০৫০
,০৫০
সিমেন্ট
২৫ ব্যাগ
২১৫
,৩৭৫
রড
২৫০ কেজি
২০
,০০০
এমএস রড
১৫ কেজি
২৫
৩৭৫
সুরকি
প্রতি গাড়ি
৩০০০
,০০০
স্পোক
২০ কেজি
১৫
৩০০
নেট
২ কয়েল
৭৫০
,৫০০
মবিল
-
-
১৫০

মোট টাকা

১৬,৭৫০

মনে রাখবেনআপনি আপনার নিজ জেলা অথবাউপজেলায় এই সস্ত কাঁচামাল ক্রয় করতে পারবেন৷ তবেকাঁচামালের সাথে আরো কিছু খরচ হতে পারে৷ যেমন-
• ঘর ভাড়া
• বিদ্যুৎ খরচ
• কাঁচামাল ক্রয়ের জন্য পরিবহন খরচ
• শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন বাবদ খরচ
• কারখানার রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ইত্যাদি

চলুন এসব খরচের একটি আনুমানিক হিসাব দেখে নেই:
বিবরণ
খরচ (টাকা)
ঘরভাড়া
,০০০
বিদ্যুত্‌ বিল
২০০
রক্ষণাবেক্ষণ
৫০০
পরিবহণ
,৫০০
বেতন (৩ জন)
,০০০
মোট টাকা
১০,২০০
তথ্যসূত্র: আইটিডিজি (২০০২): নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা

সবশেষে আপনারা চাইলে এসব নির্মাণ সামগ্রির ব্যবসায় একসাথে না করে শুধু সিমেন্ট কিংবা রড় অথবা রড়-সিমেন্টের একত্রে ব্যবসায় করতে পারেন। সেক্ষেত্রে রড়-সিমেন্টের ডিলারশিপ নিতে পারেন অথবা ডিলারের কাছ থেকে অল্প পরিমাণে নিয়ে এসে বিক্রি করতে পারেন। শুরুর দিকে আপনাকে প্রাথমিকভাবে কিছু টাকা বিনিয়োগ করতে হবে এরপর ডিলারের সাথে সম্পর্ক ভাল হলে বাকিতে পণ্য নিয়ে এসেও বিক্রয় করতে পারেন। এই ব্যবসায়ের জন্য আরেকটি ভাল খবর হল যে অনেক সিমেন্ট কিংবা রড় কোম্পানি তাদের নিজস্ব পরিবহণের মাধ্যমেও মালামাল সরবরাহ করে থাকে। এক্ষেত্রে আপনাকে আপনার এলাকায় সেই সকল কোম্পানির মার্কেটিং প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করলে আপনাদের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। তারা আপনাকে ব্যবসায় সেট আপ থেকে অন্যান্য কাজে সহায়তা করতে পারবে।  



ধন্যবাদ


No comments

Powered by Blogger.