প্রিপারিং ফর বিজনেস নট ফর বিসিএস

আরো বিজনেস আইডিয়া ও লেখা আসছে...

কফি শপের ব্যবসায়


কফি শপ ব্যবসায়
ব্যবসায়ের জন্য আমার পছন্দের সেক্টর হচ্ছে বিনোদন ভিত্তিক। অধুনা কফি শপগুলো খুবই জনপ্রিয় তরুণ ও যুবককেদের মাঝে। কফি হাতে নিয়ে গান শুনে রিলাক্স এর জন্য কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা মারার জন্য এই কফি শপ গুলোর তুলনা হয় না  আজকের ব্যবসায়ের আইডিয়া এই কফি শপকে ঘিরেই ।

ব্যবসায়ের ধরণঃ স্পোর্টস কফি শপ
এই কফি শপের আলাদা বৈশিষ্ট্য হলো এখানে বড় পর্দার টেলিভিশনে সর্বক্ষণ দেশ বিদেশের ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা চলতে থাকবে। দেশে এখনো তরুণদের একটা বড় অংশ খেলা পাগল। আর এক সাথে হইচই করতে করতে ড্রিঙ্কস আর কফি হাতে খেলা দেখার মজাই আলাদা। রুচিশীল যুগলরা এখানে আসতে পারে ভদ্র পরিবেশে আড্ডা মারার জন্য , বেকার ছেলে এখানে আসতে পারে খেলা দেখে সময় কাটানোর জন্য।  কফি শপে ফ্রি ওয়াই ফাই ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় আনার ফলে ফেসবুক পাগল ছেলে-মেয়ারা এখানে আসতে পারে কফি বা ড্রিঙ্কস হাতে মোবাইল বা ল্যাপটপ দিয়ে বসে বসে ইন্টারনেট চালানোর জন্য ।

অরিয়েন্টেড কাস্টমারঃ
''স্কুল- কলেজ- ভার্সিটিগামি ছাত্র ছাত্রী , বেকার ছেলেপেলে, খেলা পাগল তরুণ তরুণী, কর্পোরেট স্টাফ কিংবা বিভিন্ন বয়সী আড্ডাবাজদের দল।
মূল টার্গেট হওয়া উচিৎ  মিডল ক্লাস ফ্যামিলির লোকজন। দেশে ব্যবসায়ের প্রধান গ্রাহকই হচ্ছে এই মিডল ক্লাস।

ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচনঃ
কফি শপ ব্যবসায়ে সফলতার প্রথম এবং প্রধান শর্ত হলো এর সঠিক স্থান নির্ধারণ। আমাদের দেশের শতকরা ৫০ ভাগ কপি শপ বন্ধ হয়ে যায় তা সঠিক স্থানে স্থাপন না করার জন্য। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কর্পোরেট অফিস, পার্ক, শপিং সেন্টারের পাশে, মেইন রোড বা যে কোনো ব্যস্ত রোডে স্থান নির্বাচন সবচেয়ে কার্যকর। শপিংমলের ফুড কোর্টে হলে আরো ভালো কিন্তু তা একটু ব্যয়বহুল ডেকোরেশন আর দোকান নেওয়ার ডিপোজিট এডভান্সের কারনে । তাই নিজ এলাকাভিত্তিক মানুষের মুভমেন্ট যেখানে বেশি হয় এমন জায়গা দেখে প্রথমে ব্যবসায় শুরু করেন ।

শপ ভাড়াঃ
ব্যবসায় শুরুর জন্য দোকান ভাড়া নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যাতে করে খারাপ সময় আসলে দোকান ছেড়ে সহজেই মুভমেন্ট করা যায়। ২/৩ মাসের দোকান ভাড়া অগ্রিম দিয়ে ব্যবসায়ের জন্য দোকান খোজার চেষ্টা করেন।

লিগ্যাল ইস্যুজঃ
দোকান নেওয়ার পর সিটি কর্পোরেশন কিংবা স্থানীয় পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করুন । রাজস্ব বোর্ড থেকে টিন সার্টিফিকেট এবং ভ্যাট নাম্বার কালেক্ট করুন।

কফি শপের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
১. বুক ভরা সাহস
২.হার না মানা মনোভাব
৩. দুইটা ৫০ইঞ্চি টেলিভিশন
৪. প্রজেক্টর যদি চান
৫. ফ্রিজ
৬. কফির মেশিন
৭. বিভিন্ন সফট ড্রিঙ্কস
৮.জেনারেটর কানেকশন
৯.আনলিমিটেড ইন্টারনেট কানেকশন ১০. আনুষঙ্গিক (কাচের গ্লাস , কফির মগ, প্রয়োজনীয় ষ্টেশনারি)।

ডেকোরেশনঃ
এই ডেকোরেশনটা অবশ্যই হতে হবে ইউনিক। চেয়ার টেবিল থেকে দোকানের রং সবই হবে রুচিশীল, দোকানের ভিতরে ওয়ালের চারিদিকে থাকবে বিভিন্ন দেশের পতাকা এবং জার্সি কিংবা দৃষ্টিনন্দন ওয়ালপেপার। কফি ড্রিঙ্কস বিক্রির পাশাপাশি একটা কাচের সেলফ আপনি চাইলে গিফট সামগ্রি ঘড়ি, ক্রিকেট বা ফুটবল ক্লাবের জার্সি, স্পর্টস ব্রেইসলেট এসবও বিক্রি করতে পারেন। দোকানের বাহিরে বড় ব্লাকবোর্ড রাখতে হবে, প্রতিদিন খেলার সময়সুচি চক দিয়ে লিখে বিজ্ঞাপন করার জন্য।

ব্যবসায়ের পুঁজিঃ
💧টেলিভিশন ২ টা - ২ লাখ
💧ফ্রিজ - ৩০ হাজার
💧কফির মেশিন - ৫০-৬০ হাজার
💧বিভিন্ন ড্রিঙ্কস - ২০ হাজার
💧অন্যান্য - ৫০ হাজার
💧ডেকোরেশন - ৩ লক্ষ (আনুমানিক)
💧ওয়াইফাই হটস্পর্ট ইন্টারনেট - ৫-৬ হাজার
💧৬ মাসের দোকান চালানোর মত খরচ।
তবে খরচের তারতম্যতা দেখা যাবে আপনি কিভাবে শপ সাজাবেন তার উপর।

সর্বোচ্চ জোর দিনঃ
🎖ন্যায্য দামে কোয়ালিটি কফি সার্ভ করতে;
🎖 বাহিরের নয়েজ কন্ট্রোল করতে;
🎖 প্রচারণার জন্য অনলাইনে  নিত্যনতুন বিজ্ঞাপন দিতে;
🎖 রেগুলার কাস্টমার ও তার সাথে আসা গেস্টকে এক্সট্রা প্রায়োরিটি দিন। 
 
কফি বিক্রি হতে লাভঃ
গড়ে ৫০ জন কাস্টমার যদি প্রতিদিন সার্ভিস দিতে পারেন ড্রিঙ্কস কফির মুল্য গড়ে ৫০ টাকা করে ধরলে ৩০ দিনে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। ব্যবসায় আসলে গানিতিক হিসাবে চলে না, একবার রানিং হয়ে গেলে এই ব্যবসায় মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় করা কোনো ব্যাপারই না। স্টারটিং-এ টার্গেট ক্লায়েন্ট ধরতে পারলে খরচ বাদ দিয়ে ২০-২৫ হাজার ইজিলি আয় করা যাবে।

তো শুরু হোক পথচলা!
ব্যবসায়িক দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম। মনে রাখবেন ইচ্ছা শক্তি আর কন্টিনিউ কাজ করার আগ্রহ থাকলে যে কোনো কাজেই আপনি সফল হবেন। ব্যবসায় দেওয়াটাই কিন্তু শেষ নয় এটা টিকিয়ে রাখতে হলে লম্বা পরিশ্রমী পথ পাড়ি দিতে হয়।

2 comments:

Powered by Blogger.